মিলি জাকারিয়া রাজনীতি শুরু করেন সেই ১৯৮৯ সাল থেকে। জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের একজন পরীক্ষিত নেত্রী হলেও নিজেকে শুধুমাত্র একজন শহীদ জিয়ার আদর্শে দেশ গড়ার ক্ষুদ্র কর্মী ও জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের মাধ্যমে দেশের সেবক হিসাবে পরিচয় দিতেই গর্ব বোধ করেন। দলের বিভিন্ন সময়ের রোড মাচর্, লংমার্চ থেকে শুরু করে দলীয় সকল আন্দোলন সংগ্রামের দাবী আদায়ের একটি অগ্নীকণ্ঠ সৈয়দা মিলি জাকারিয়া।
আগামী ৩০শে জানুয়ারী ২০২০ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ”নির্বাচনী পরিক্রমা’র” অংশ হিসাবে নিউজবক্স’র বিশেষ প্রতিনিধি মুখোমুখি হয়েছিল ৬,৭,৮ ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা আসনে কাউন্সিলর পদে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সৈয়দা মিলি জাকারিয়ার সাথে। নির্বাচন, নির্বাচনী পরিবেশ এবং একজন প্রার্থী হিসাবে তার অংশ গ্রহনের কারন, ভবিষ্যত পরিকল্পনাসহ তার ব্যক্তিগত অজানা কথা জানিয়েছেন নিউজবক্স’র মাধ্যমে এলাকার ভোটারসহ জনগনের কাছে।
সৈয়দা মিলি জাকারিয়ার জানান, ছাত্রজীবনে আইডিয়াল কলেজে পড়াকালীন সময়েই রাজনীতির হাতেখড়ি। ধীরে ধীরে সময়ের সাথে সাথে বেড়ে উঠা এবং জীবনের সকল আবশ্যকতার পাশাপাশি তিনি রাজনীতির প্রতিটি কর্মকান্ডে সক্রিয় একজন নারী কর্মী। একাধিকবার জেল খেটেছেন। পুলিশের লাঠির আঘাত এবং বুটের লাথি খেয়েছে অগনিত। সে হিসাব করতে গেলে কেবল কষ্টই বাড়ে। ১/১১ পর থেকে প্রতিটি রাজনৈতিক কর্মকান্ডে একনিষ্ঠ দলীয় সেবক এবং নেত্রী মুক্তির আন্দোলনে লাখো কণ্ঠের বিপ্লবী সাথে আমিও একজন।
সৈয়দা মিলি জাকারিয়ার আরও জানান, বৃহত্তর ঢাকার জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হিসাবেও দ্বায়িত্বভার পালন করেছি। ১/১১ এর সময় জীবনের সবচেয়ে কষ্টের একটি ঘটনা ঘটে। প্রত্যেক নারীর সবচেয়ে বড় স্বপ্ন মাতৃত্ব। সেদিন সেই ফকরুদ্দিন- মইনউদ্দিনের পেটোয়া পুলিশ বাহিনীর কতিপর কুলাঙ্গার পুলিশ সদস্য’র বেপরোয়া পিটুনিতে রাজপথে আমার এ্যবোশন হয়। আমি সেদিন আমার অনাগত সন্তানকে হারিয়েছি। রাজপথ আমার অনাগত সন্তানের রক্তে লাল হয়েছে। আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কোনদিন সেদিনের সেই কষ্টের কথা ভুলবো না। কোন নারী, কোন মা ভুলতে পারে কি না আমি জানিনা। সেদিন এতোকিছুর পরও আমাকে সেই পেটোয়া বাহিনীর হাত থেকে বাঁচাতে আমার সহকর্মী-সহযোদ্ধা ও সিনিয়র আপারা রাতের অন্ধকারে লুকিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল।
আমি ১/১১ এর সরকারের প্রথম ভ্রাম্যমান আদালতের প্রথম দন্ডপ্রাপ্ত ও কারাভোগী আসামী। সেদিন আমি দলীয় কর্মসূচী শেষে বাসায় ফেরার পথে খিলগাও হতে গ্রেফতার হই। সেদিন আমার সাথে আরো দুই সহযোদ্ধা গ্রেফতার হয়। আমাদের ৩মাস সাজা হয়। একবার জাহাঙ্গীর গেটের সামনে মিছিলে পুলিশের বেধরক পিটুনিতে গুরুতর আহত হই। এখনও আমার বাম পায়ে বেশি ভর করে হাটতে পারিনা কষ্ট হয়।
আমার একমাত্র ছেলে। কিন্তু রাজনীতি করার সুবাদে আমি আমার ছেলেকে সময় দিতে পারিনি। আমার ছেলেকে ছোট অবস্থায় তারে রেখে জেল খাটতে হয়েছে। আমি শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারনে মোট ৩বার বিভিন্ন মেয়াদে জেলে যাই। আমি আমার পরিবারকে সময় দিতে পারিনি। রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিয়েই সব সময় ব্যস্ত থেকেছি। আজও আছি। বলতে পারেন শহীদ জিয়ার আদর্শকে বুকে ধারন করে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদের পতাকা হাতে নিয়ে রাজপথে এগিয়ে চলছি। চেষ্টা করছি দলের মাধ্যমে নিজের সাধ্য অনুযায়ী দেশ ও জনগনের সেবা করতে।
এবারের নির্বাচন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেহেতু দল এবার নির্বাচনে অংশ গ্রহন করছে সেহেতু দলের একজন কর্মী হিসাবে আমি নির্বাচনকে স্বাগত জানাই। দল থেকে আমাকে আমার মিরপুর ৬,৭,৮ ওয়ার্ডে সংরক্ষিত আসনে একজন মহিলা কমিশনার প্রার্থী হিসাবে মনোনীত করেছে সেহেতু এলাকার সকল ভোটার ও তাদের ভালোবাসা নিয়ে আমি তাদের সরাসরি অংশগ্রহনে ভোটের মাধ্যমে জয়ী হতে নেত্রী ও দলকে উপহার দিতে চাই। একজন মহিলা কমিশনার হিসাবে কাজের মাধ্যমে দল ও এলাকার বাসিন্দাদের ভালোবাসার প্রতিদান দিতে চাই।
তিনি আরও জানান, আমি একটি কথা বলতে চাই, দেখুন যেকোন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শুধুমাত্র সেই একটি ওয়ার্ডের ভোটারের ভোটের মাধ্যমে জয়ী হয়ে যে সন্মান ও কাজের সুযোগ পেয়ে থাকেন। সেখানে একজন মহিলা কমিশনার ৩টি ওয়ার্ডের সকল ভোটারের ভোটে জয়ী হলেও সে সন্মান ও কাজের সুযোগ পায়না। এবিষয়টি আমাকে ব্যাথিত করে।
এক প্রশ্নের জবাবে মিলি জাকারিয়া জানান, আমি ব্যক্তিগতভাবে সামাজিক বিভিন্ন সংগঠনের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখে বিভিন্ন সেবা মূলক ও সামাজিক কাজ করেছি এখনও সাধ্যমতো করছি। একাধিক এনজিও, শিশু অধিকার, পিছিয়ে পড়া নারীর অধিকার আদায় নিয়ে সরাসরি কাজ করছে এমন একাধিক প্রতিষ্ঠান, সংগঠনে বেশ কয়েক বছর কাজ করেছি। আমি জানি আমাদের সকল পর্যায়ের নারী, শিশুর কি প্রয়োজন এবং তাদের প্রয়োজন সমাধানের পথ কি।
একাধিক প্রার্থীর মধ্যে কেন ভোটার আপনাকে বেছে নেবেন এমন প্রশ্নের জবাবে মিলি জাকারিয়া জানান, দশজন প্রার্থীর মধ্যে জনগন যখন একজন প্রার্থীকে ভোটের মাধ্যমে জয়ী করবে এটাই স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে ভোটারগণ বিশ^াস করেন যে এ প্রার্থী নিশ্চয় তাদের জন্য কিছু করার সাহস, শক্তি ও কাজের প্রতি আগ্রহ রয়েছে। আমি মনে করি আমি ব্যক্তি মিলি জাকারিয়ার এসব গুন আছে। আমাকে ভোটারসহ এলাকার সকল পর্যায়ের গনমানুষের কাছে আমার অতীত বিভিন্ন সেবামূলক কর্মকান্ড দিয়ে তাদের কাছের মানুষ, আপনজন ও আস্থাভাজন হিসাবে গড়ে তুলেছি। তারা আমাকে তাদের আত্বার আত্বীয় করে নিয়েছে বলেই আমি তাদের কাছে মিলি জাকারিয়া আপা হিসাবেই গণ্য।
এবারের র্নিবাচনে ইভিএমের ব্যবহার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে মিলি জাকারিয়া বলেন, আমি বিশ্বাস করতে চাই সরকারের সকল অপচেষ্টা প্রতিহত করে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠ করার সকল চেষ্টা নির্বাচন কমিশন করবেন। তবে ইভিএম দিয়ে ভোট দেয়ার পদ্ধতিতে আমি বিশ্বাস করতে পারছিনা। কারন যেখানে পৃথিবীর অনান্য দেশে ইভিএম পদ্ধাতি একটি বিতর্কিত পদ্ধতি হিসাবে ইতিমধ্যে প্রমানিত হয়েছে সেখানে আমাদের দেশে এ পদ্ধতি কতটুকু সঠিক হবে তা সহজেই অনুমেয়। এ পদ্ধতিতে ভোটার ভুল ভোট দিলে ডিলিট করার একটি অপশন রয়েছে। সেখানে টেম্পারিং হবেনা একথা আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়।
সবশেষে সৈয়দা মিলি জাকারিয়া বলেন, জনগনের ভোটের অধিকার রক্ষায় এবং গনমানুষের প্রাণের দাবী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনকে বেগবান করতে দল এ নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেছেন। জনগন মুখিয়ে আছে তাদের ভোট ও ভাতের অধিকার ফিরিয়ে আনতে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে। তাদের পছন্দমতো প্রার্থীকে বিজয়ী করে তাদের সেবা করার সুযোগ করে দিতে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) তাদের একজন কর্মী হিসাবে আমাকে মূল্যায়ণ ও মনোনীত করে এবারের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ গ্রহনের সুযোগ করে দিয়েছে। দলের সকল নীতিনির্ধারকদের ধন্যবাদ এবং আমি বিশ^াস করি আমার ৬,৭,৮ ওয়ার্ডের ভোটাররা যদি বিনা বাধায় নিরপেক্ষ ভোট দিতে পারে তাহলে তারা অবশ্যই আমাকে তাদের ভোটের মাধ্যমে জয়ী করে তাদের সেবার সুযোগ দেয়ার জন্য মুখিয়ে আছে।